যে মাছ সাঁতরায় না, ঠোঁটে লিপস্টিক পরে হেঁটে বেড়ায়

বিস্ময়ে পরিপূর্ণ আমাদের এই দুনিয়া, বিস্মিত হতে আমরা পছন্দও করি বটে। কতটুকু বিস্মিত হবেন? যদি জানতে পারেন মাছ হাটে?

 

অনেকেই খুব একটা অবাক হবেন না, অনেকেই কৈ মাছকে কানে হেটে যেতে দেখেছেন। কৈ মাছ যদিও ডাঙ্গায় উঠলে পানির খোঁজে মাথার দুই পাশের কানকো দিয়ে চলাফেরা করে, যাকে আমরা সাধারনত কানে হাটা বলে থাকি, কিন্তু তবুও পানির মধ্যে কৈ মাছ সাধারণ মাছের মতোই সাঁতরায়। কিন্তু গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের আশেপাশের সমুদ্রে পাওয়া এক প্রজাতির পানির মধ্যেই হেটে বেড়ায়।

 

দক্ষিন আমেরিকার ইকুয়েডোর এর সমুদ্রে কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত প্রদেশ গালাপাগোস। ওয়াইল্ডলাইফ পর্যবেক্ষণের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৮৩৫ সালে চার্লস ডারউইন আসেন এ দ্বীপে, জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ করতে, এ দ্বীপে তার আবিষ্কার কম নয়।

 

তার এ পদাঙ্ক অনুসরন করে সি এল হাবস ১৯৫৮ সালে হটাত খুজে পান একটি অদ্ভুত প্রজাতি, যার বৈজ্ঞানিক নাম Ogcocephalus darwini, আমরা যাকে চিনি রেড লিপড ব্যাট ফিশ বা গালাপাগস ব্যাট ফিশ নামে (Red-lipped batfish)। মুখের অগ্রভাগে থাকা লাল লিপস্টিক দেয়া নারীর মতো অদ্ভুত লাল ঠোঁট থাকার কারণেই নাম রেড লি পড় আর মাছটি কিছুটা বাদুরের মতো দেখতে বলে ঠাট ফিশ। অদ্ভুত জাতের এই মাছ একদমই ভালো সাঁতরাতে পারে না। তার অভিযোজিত পেকটোরাল, পেল্ভিক এবং আনাল (বক্ষ ও শ্রোণী) পাখনা দিয়ে হেটে বেড়াতেই অধিক পারদর্শী এই মাছ।

 

অনেকটা শরীর হেলিয়ে দুলিয়ে সমুদ্রের তলদেশে হেটে বেড়ায় এই মাছ। যখন গতির প্রয়োজন পরে তখন বক্ষ পাখনা দিয়ে টান দিয়ে এবং এর শক্তিশালী লেজকে দ্রুত ঝাকিয়ে সামনে এগিয়ে যায় Red-lipped batfish। অদ্ভুত এই মাছটি পাওয়া যায়, পেরু ও গালাপাগোস দ্বীপ এর আশেপাশের সমুদ্রে, ৩ থেকে ৭৬ মিটার গভীর পানিতে, এই নির্দিষ্ট অঞ্চল ছাড়া ও ক্যালিফোর্নিয়াসহ আরো দুই এক জায়গায় এই প্রজাতির মাছ ধরা পরে থাকলেও তা খুবই দুর্লভ।

 

মূলত সমুদ্রতলের বাসিন্দা অদ্ভুত লাল ঠোঁট বিশিষ্ট এই রেডলিপড ব্যাট ফিশ। তবে তীর হতে দূরে সমুদ্রের উপরিভাগেও মাঝে মাঝে উঠে আসে এই প্ৰজাতি। হয়তো সানবাথ করতে, আহার করে শিকার করে, তার প্রধান খাদ্য ছোট ছোট মাছ, শামুক গোত্রের প্রাণী, কাঁকড়া এবং কেঁচোর সামুদ্রিক জাতভাই। শিকারে সহায়তার জন্য তার মাথায় রয়েছে আকর্ষণীয় ইলিসিয়াম। সাধারণত বয়সের পরিপূর্ণতার সঙ্গে সঙ্গে ইলিসি য়াম মাথার উপরে বৃদ্ধি লাভ করে পিঠের পাখনাগুলো জোড় হয়ে ইলিসিয়াম এর উপরিভাগে এস্কা বলে একটি অংশ থাকে।

 

রেড লিপড ব্যাট ফিশ এর রং পিঠের দিকে হাল কা খয়েরি থেকে ধুসর, পেটের দিকে সাদাটে। মাথা থেকে পিঠের উপর দিয়ে চলে গেছে ঘন খয়েরী দাগ, সঙ্গে আছে লাল ঠোঁট । ধারনা করা হয় এই লাল ঠোঁট প্রজনন মৌসুমে প্রজাতিকে আলাদা করে চিনতে, এবং জননের জন্য নিজ প্রজাতির জনন উৎসাহী মাছকে আকর্ষণ করতে সাহায্য করে থাকে। এই মাছটির মেরুদণ্ডের মধ্যে রয়েছে ১৯ বা ২০ টি কশেরুকা, মাছ টি প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।

 

অদ্ভুত এই প্রজাতির মাছের প্রধান অবস্থান সমুদ্রে র তলদেশে, যেখানে আলো তেমন একটা থাকে না বললেই হয়। অথচ সাধারনত মেরিন আকুরিয়াম গুলোয় উজ্জ্বল আলোর বাবস্থা করা হয়ে থাকে দর্শনার্থী এবং গবেষকদের সুবিধার জন্য, এই উজ্জল আলোতে রেড লিপড ব্যাট ফিশ রাখা সম্ভব নয় তাই এই মাছ দেখতে হলে অবশ্যই আপনাকে যেতে হবে এর বাসস্থানে, সমুদ্রের তলদেশে।   সূএ: ডেইলি-বাংলাদেশ

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» মুজাহিদ ছিলেন একজন আমানতদার ও দক্ষ নেতা: জামায়াত আমির

» সচিবালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

» বেশি সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন: প্রেস সচিব

» বিমানবন্দরের পথে খালেদা জিয়া

» ‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে ধনী-গরিবের ভারসাম্য রক্ষা করতে চায়’

» বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কূটনীতি হবে বাণিজ্যকেন্দ্রিক : আমীর খসরু

» বিএনপি হাসিনার মতো আয়নাঘর বানাবে না : জয়নুল আবদিন

» ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু ১১ জানুয়ারি

» সিলেটকে ১২৫ রানে গুটিয়ে ফেলল বরিশাল

» পরিবেশ সুরক্ষায় বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে ইইউ : রিজওয়ানা হাসান

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

যে মাছ সাঁতরায় না, ঠোঁটে লিপস্টিক পরে হেঁটে বেড়ায়

বিস্ময়ে পরিপূর্ণ আমাদের এই দুনিয়া, বিস্মিত হতে আমরা পছন্দও করি বটে। কতটুকু বিস্মিত হবেন? যদি জানতে পারেন মাছ হাটে?

 

অনেকেই খুব একটা অবাক হবেন না, অনেকেই কৈ মাছকে কানে হেটে যেতে দেখেছেন। কৈ মাছ যদিও ডাঙ্গায় উঠলে পানির খোঁজে মাথার দুই পাশের কানকো দিয়ে চলাফেরা করে, যাকে আমরা সাধারনত কানে হাটা বলে থাকি, কিন্তু তবুও পানির মধ্যে কৈ মাছ সাধারণ মাছের মতোই সাঁতরায়। কিন্তু গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের আশেপাশের সমুদ্রে পাওয়া এক প্রজাতির পানির মধ্যেই হেটে বেড়ায়।

 

দক্ষিন আমেরিকার ইকুয়েডোর এর সমুদ্রে কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত প্রদেশ গালাপাগোস। ওয়াইল্ডলাইফ পর্যবেক্ষণের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৮৩৫ সালে চার্লস ডারউইন আসেন এ দ্বীপে, জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ করতে, এ দ্বীপে তার আবিষ্কার কম নয়।

 

তার এ পদাঙ্ক অনুসরন করে সি এল হাবস ১৯৫৮ সালে হটাত খুজে পান একটি অদ্ভুত প্রজাতি, যার বৈজ্ঞানিক নাম Ogcocephalus darwini, আমরা যাকে চিনি রেড লিপড ব্যাট ফিশ বা গালাপাগস ব্যাট ফিশ নামে (Red-lipped batfish)। মুখের অগ্রভাগে থাকা লাল লিপস্টিক দেয়া নারীর মতো অদ্ভুত লাল ঠোঁট থাকার কারণেই নাম রেড লি পড় আর মাছটি কিছুটা বাদুরের মতো দেখতে বলে ঠাট ফিশ। অদ্ভুত জাতের এই মাছ একদমই ভালো সাঁতরাতে পারে না। তার অভিযোজিত পেকটোরাল, পেল্ভিক এবং আনাল (বক্ষ ও শ্রোণী) পাখনা দিয়ে হেটে বেড়াতেই অধিক পারদর্শী এই মাছ।

 

অনেকটা শরীর হেলিয়ে দুলিয়ে সমুদ্রের তলদেশে হেটে বেড়ায় এই মাছ। যখন গতির প্রয়োজন পরে তখন বক্ষ পাখনা দিয়ে টান দিয়ে এবং এর শক্তিশালী লেজকে দ্রুত ঝাকিয়ে সামনে এগিয়ে যায় Red-lipped batfish। অদ্ভুত এই মাছটি পাওয়া যায়, পেরু ও গালাপাগোস দ্বীপ এর আশেপাশের সমুদ্রে, ৩ থেকে ৭৬ মিটার গভীর পানিতে, এই নির্দিষ্ট অঞ্চল ছাড়া ও ক্যালিফোর্নিয়াসহ আরো দুই এক জায়গায় এই প্রজাতির মাছ ধরা পরে থাকলেও তা খুবই দুর্লভ।

 

মূলত সমুদ্রতলের বাসিন্দা অদ্ভুত লাল ঠোঁট বিশিষ্ট এই রেডলিপড ব্যাট ফিশ। তবে তীর হতে দূরে সমুদ্রের উপরিভাগেও মাঝে মাঝে উঠে আসে এই প্ৰজাতি। হয়তো সানবাথ করতে, আহার করে শিকার করে, তার প্রধান খাদ্য ছোট ছোট মাছ, শামুক গোত্রের প্রাণী, কাঁকড়া এবং কেঁচোর সামুদ্রিক জাতভাই। শিকারে সহায়তার জন্য তার মাথায় রয়েছে আকর্ষণীয় ইলিসিয়াম। সাধারণত বয়সের পরিপূর্ণতার সঙ্গে সঙ্গে ইলিসি য়াম মাথার উপরে বৃদ্ধি লাভ করে পিঠের পাখনাগুলো জোড় হয়ে ইলিসিয়াম এর উপরিভাগে এস্কা বলে একটি অংশ থাকে।

 

রেড লিপড ব্যাট ফিশ এর রং পিঠের দিকে হাল কা খয়েরি থেকে ধুসর, পেটের দিকে সাদাটে। মাথা থেকে পিঠের উপর দিয়ে চলে গেছে ঘন খয়েরী দাগ, সঙ্গে আছে লাল ঠোঁট । ধারনা করা হয় এই লাল ঠোঁট প্রজনন মৌসুমে প্রজাতিকে আলাদা করে চিনতে, এবং জননের জন্য নিজ প্রজাতির জনন উৎসাহী মাছকে আকর্ষণ করতে সাহায্য করে থাকে। এই মাছটির মেরুদণ্ডের মধ্যে রয়েছে ১৯ বা ২০ টি কশেরুকা, মাছ টি প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।

 

অদ্ভুত এই প্রজাতির মাছের প্রধান অবস্থান সমুদ্রে র তলদেশে, যেখানে আলো তেমন একটা থাকে না বললেই হয়। অথচ সাধারনত মেরিন আকুরিয়াম গুলোয় উজ্জ্বল আলোর বাবস্থা করা হয়ে থাকে দর্শনার্থী এবং গবেষকদের সুবিধার জন্য, এই উজ্জল আলোতে রেড লিপড ব্যাট ফিশ রাখা সম্ভব নয় তাই এই মাছ দেখতে হলে অবশ্যই আপনাকে যেতে হবে এর বাসস্থানে, সমুদ্রের তলদেশে।   সূএ: ডেইলি-বাংলাদেশ

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com